সৃষ্টির সূচণা সংক্ষিপ্ত



সৃষ্টির সূচণা


কোন কাজই আপনা-আপনি হয়না, কাউকে না কাউকে করতে হয় । যেমন, একটি কম্পিউটার আপনা-আপনি হয় নিই ।কাউকে না কাউকে তৈরী করতে হয়েছে, কম্পিউটার কিন্তু অনেক কাজ করতে পারে, কারন তাকে যিনি তৈরী করেছেন তিনি জানতেন তিনি কম্পিউটার টা কেন তৈরী করছেন, কিন্তু কম্পিউটারটা তা জানেনা । কারন তাকে জানার ক্ষমতা দেয়া হয়নিই । তাকে শুধু কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । তাই শুধু সে কাজ করে । কিন্তু সে নিজে কাজ করতে পারেনা তাকে নির্দেশনা দিতে হয়, কাজের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে হয় তাই  সফটওয়্যার এর মাধ্যেমে তাকে শিক্ষা দেয়া হোয়েছে । সফটওয়্যার ছাড়া সে অন্য কিছুতে বুঝতে পারবেনা । এটা তার সৃষ্টিকর্তা জানেন তাই প্রত্যেক বার নতুন নতুন কাজে তাকে নতুন নতুন ভাবে প্রগ্রাম দ্বারা কম্পিউটারকে প্রশিক্ষণ করেন ।  অবশেষে নষ্ট হয়ে গেলে তা হয় ধব্বংস বা নতুন সৃষ্টি করেন । আর কাজ টি স্রষ্টা কাছে খুবিই সহজ । কিন্তু হ্যাকার সব সময় চায় অন্যের কম্পিউটার এর ক্ষতি করে নিজের লাভ করতে ও অন্যের ক্ষতি করতে । তারা বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা কম্পিউটারের ক্ষতি করে তাদের কাজে সমস্যা করতে, ও নষ্ট করতে, যেন মালিক বা স্রষ্টা তাকে ধব্বংস করে দেয় অথবা সঠিক করে নেয় । এটাই কম্পিউটারের ক্ষেত্রে মহাসত্য । ঠিক অপর দিকে আরও একটি মহাসত্য আছে ।
কারন ছাড়া কিছুই ঘটে না । একদিনেও কিছুই ঘটে না । এটাই মহা সত্য ।

তাহলে আমাদের কে সৃষ্টি করল ? কেন করল ? আমাদের কাজ কি ? আমাদের প্রশিক্ষন কি ? ভাইরাস কে বা কি ? আমাদের ধব্বংস কবে হবে ? হিসাব কবে হবে ? শেষ পরিনতি কি ? অনেক প্রশ্ন ............।
আশা করি এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব ।  ইনশাল্লাহ

আমরা একটু ইতিহাস দেখে আসি......
আমরা জানি যে প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন ধর্ম পালন করে আর তারা বিশ্বাস করে যে একজন সত্তা আছেন যিনি মহা ক্ষমতাশালী, তিনি আদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত বিদ্যামান, তার কোন সৃষ্টি বা ধব্বংস নেই, তিনি সবাই কে সৃষ্টি করেছেন, তাকে কেউ সৃষ্টি করেনিই । এই কথা সবাই মানেন । যারা মানেন না তারা লজিক মানেন আর অনেক সত্য ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারেন না লজিক দিয়ে এইটাই তাদের সমস্যা । ফলে তারা সেই ঘটনা কে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন ।

যাই হোক আমরা একটি সূত্র পেলাম তা হল আল্লাহ, ভগবান,ঈশর, লড,  ইত্যাদি । কিন্তু এখানে সব সত্তার একটি কিতাব আছে, সব কিতাবেই ঐ একজন কেই বোঝানো হোয়েছে । সব কিতাবেই ঐ সত্তার গুন, অধিকার, শেষ পরিনতির কথা একই বলা হয়েছে । ঐ কিতাব গুলোতে মানুষকে কিভাবে চলতে
 হবে ?তাদের কাজ কি ? কাজের পদ্ধতি কি ? সব শেখানো আছে ।এবং এইগুল শেখানোর জন্য একজন মানুষকে প্রশিক্ষক রুপে পাঠানো হয়েছে । এবং সর্বশেষে যে আসবে সে সম্পর্কে পূর্ণ বর্ণনা দেয়া আছে ।

এবং তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যে একটি জীন জাতি আছে যাদের মধ্যে থেকে একজন শয়তান হয়ে গেছে সে হল ইবলিশ ।
যেহেতু একটি বই যদি ১০০ বার লিখা হয় তাহলে ১০০ নাম্বার বই টি আমরা কিনব এবং পরবো কারন এটিই সর্ব শেষ তার মানে এটিই ৯৯ নাম্বার থেকে উন্নত । তাই আমরা তর্কে যাবনা শুধু সত্য টা গ্রহন করবো ।
এখন সূত্র ফেলি ।
কম্পিউটার স্রষ্টা = মানূষের স্রষ্টা
সফটওয়্যার  =  কিতাব + নবী রাসুল
ভাইরাস = শয়তান
শেষ পরিনতি, ধব্বংস এবং পুনঃসৃষ্টি =ধব্বংস এবং পুনঃসৃষ্টি
তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্য পেয়ে গেছি ।
তাহলে এটাই সত্য যে আল্লাহ তায়ালাই আমাদের স্রষ্টা
আমাদের কাজ হছে আল্লাহর ইবাদত করা ।
কারন পবিত্র আল কোর-আন শরীফ সর্বশেষ কিতাব এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)  সর্বশেষ নবী ও রাসূল
তাই আমাদের উচিত এই কিতাব ও এই নবীর প্রশিক্ষন গ্রহন করা ও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা ।
শয়তান এর ধোকাই না পড়া, কারন শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু ।
এখন আসুন আমরা জানি আল্লাহ কেন এবং কিসের জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন ।



এই পৃথিবীতে একদিন শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন- ছিলেন তখন আসমান-জমিন তথা সৃষ্টির কোন কিছুই ছিল না সর্বত্র কেবল আল্লাহ আর আল্লাহ তখন আর আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুই নেই আল্লাহই এই শূন্যতার সমাপ্তি ঘটাবেন এই শুভ লগ্নেই আল্লাহ তাআলা তার  পেয়ারা হাবীব, রাহমাতুল্লিল আলামীন খাতামুন নাবীঈন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসালাম এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন পরিভাষায় এই নূরকেই নূরে মুহাম্মাদী বলা হয়
এই নূরে মুহাম্মাদী হল সৃষ্টি জগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি আরশ কুরসী লৌহ-কলম, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, জীন-মানব, বেহেশ্-দোজখ, ফেরেশতা ইত্যাদি নূরে মুহাম্মাদীর পরে সৃষ্টি করা হয়েছে এই প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
হযরত জাবের (রাঃ)রেওয়ায়েত করেছেন যে, একদিন আমি হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে গিয়ে আরজ করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমাকে বলুন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন ? উত্তরে রাসূল (সঃ) বললেনহে জাবের! আল্লাহ তাআলা সমস্ত বস্তুর আগে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহর বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট নূর হবে এরপর উক্ত নূর আল্লাহর কুদরতে তার ইছানুযায়ী চলমান ছিল; সেই সময় লৌহ-কলম, আসমান-জমিন, বেহেশ্-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য, ফেরেশতা, জীন মানুষ কোন কিছুই ছিল না ’ ”  
এক হাদিসে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃআমি আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বৎসর আগে আমার প্রভুর দরবারে একটি নূর ছিলাম
অনেকে মনে করে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাঃ) তার নিজের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তাহলে তো রাসূল বলে কেহ থাকতো না সেও আল্লাহই হয়ে যেত কিন্তু আল্লাহ বলেছেন
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ
অথ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ (বিধান দাতা, ইবাদতের মালিক, হুকুম দাতা) নাই, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তার প্রিয় নবী রাসূল (কোর-আন + হাদীস = বিধান )
ব্যাপারে সয়ং আল্লাহই সাক্ষ্য দিছেন তিনি এক এবং অদ্বিতিয়, তাকে কেউ সৃষ্টি করেনিই তার অংশ থেকেও কেউ সৃষ্টি হয়নি এক্ষেত্রে একটি হাদীস বর্ণীত আছে,
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহ পাক যখন সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি এবং পৃথিবীকে নীচু আকাশকে উঁচু করার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি তার সৃষ্টি করা নূর হতে কিছু নূর নিয়ে বললেন, হে নূর তুমি আমার হাবীব মুহাম্মাদ (সাঃ) হয়ে যাও ’ মুহাম্মাদ সাল্লারলাহু আলাইহিসছাল্লাম হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ৫০০ বছর পূর্বে আরশ মুয়াল্লাহ প্রদক্ষিন করেছিলেন বলছিলেন 'আলহামদুলিল্লাহ' সেই সময় এতাই ছিল তার যিকির তখন আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে আমার দোস্ত, এই জন্যেই আমি আপনার নাম রেখেছি মুহাম্মদ ।

উপরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছেঃ- তিনি তার সৃষ্টি করা নূর হতে কিছু নূর নইলেন । এর ব্যাখ্যা হযরত আলী (রাঃ)  এর এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় । যেমন হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা একদিন আমি বিশ্বনবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহু! আপনি কোন বস্তু হতে সৃষ্টি হয়েছেন ? তখন নবীজী উত্তর দিলেন,যখন আমার প্রভু আমার কাসে ওহী পাঠালেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আমার রব্ব !  আপনি কোন বস্তু দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন ?
তদুত্তরে আল্লাহপাক বললেনঃ আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম!  যদি আপনি সৃষ্টি না হতেন তাহলে আমি আসমান ও জমিন কিছুই সৃষ্টি করতাম না । 
পুনরায় আমি বললামঃ হে আমার রব্ব! কোন বস্তু হতে আমাকে সৃষ্টি করেছেন ? 
আল্লাহপাক বললেন হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আমি আমার সাদা নূরের স্বচ্ছতা ও নির্মলতার প্রতি লক্ষ্য করলাম, যেই নূরকে আমি প্রথম হতেই  আমার কুদরতের দ্বারা নতুন ভাবে আদেশ দিয়ে সৃষ্টি করে রেখেছি । আমি তার সম্মান প্রকাশনার্থে তাকে আমার আজমতের দিকে সম্মোধন করলাম, আতঃপর উক্ত নূর হতে অংশ বের করে তাকে আবার তিন ভাগে বিভক্ত করলাম । প্রথম ভাগ হতে আপনাকে ও আপনার আহলে বাইতকে (বংশকে) তৈরী করেছি এবং দ্বিতীয় ভাগ হতে আপনার স্ত্রী সকল ও সাহাবীগনকে আর তৃতীয় ভাগ হতে যারা আপনার প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা রাখে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি । 

কিয়ামতের দিন উক্ত নূর আবার আমার নূরের দিকে ফিরিয়ে আনা হবে  । আমার রহমতে আপনাকে ও আপনার আহলে বাইতকে এবং আপনার স্ত্রী ও সাহাবীগনকে, আর যারা আপনাকে সর্বাধিক ভালবাসে তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাব । অতএব, আপনি আমার পক্ষ হতে উপরোল্লিখিত লোকদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করার এই মহা সুসংবাদ জানিয়ে দিন ।

বিশ্বনবীর (সাঃ) এর নূর হতে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব

অতিশয় দয়াবান আল্লাহ তাবারাক ও তা'আলা যখন মাখলুকাত সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, তখন উক্ত নূরকে চার ভাগে ভাগ করে প্রথম আংশ হতে কলম দ্বিতীয় আংশ হতে লাওহে মাহফুজ ও তৃতীয় আংশ হতে আরশ মোয়াল্লাহ সৃষ্টি করলেন । 

পুনরায় চতুর্থ আংশকে আবার ৪ ভাগে বিভক্ত করলেন । প্রথম আংশ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের ও দ্বিতীয় আংশ দিয়ে কুরসী (সিংহাসন) এবং তৃতীয় আংশ দ্বারা অবশিষ্ট অপরাপর সকল ফেরেশতাকে পয়দা করলেন । এরপর বাকি ৪র্থ আংশকে পুনরায় ৪ ভাগে ভাগ করে প্রথম আংশ দ্বারা সমস্ত আসমান ও দ্বিতীয় আংশ হতে সমস্ত জমিন এবং তৃতীয় আংশ হতে বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি করলেন নূরের অবশিষ্ট ৪র্থ আংশ আবার ৪ ভাগে ভাগ করে প্রথম ভাগ হতে মুমিন বান্দাদের চোখের জ্যোতি ও ২য় ভাগ হতে তাদের কলবের জ্যোতি আর এটাই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার মা'রেফাত । আর ৩য় ভাগ হতে তাওহীদ বা একত্ববাদের নূর তথা কালেমা তাইয়্যেবাহ সৃষ্টি করলেন ।

No comments:

Post a Comment